“বিবর্তনবাদঃ নাস্তিকদের শেষ সম্বল” – বিতর্কের অবসান

নাস্তিকদের সবচেয়ে প্রিয় ও হটশট আর্গুমেন্ট হচ্ছে “বিবর্তনবাদ” ! এবং তারা মনে করে বিবর্তনবাদের মাধ্যমে তারা বিশ্বজয় (!) করে ফেলেছে! বিবর্তনবাদ প্রমাণের মাধ্যমেই নাস্তিক-মুরতাদেরা মনে করে শিশুকামিতা,সমকামিতার মত  জঘন্য বিষয়গুলো বৈধতা পেয়ে যায়। তাই মানবতার শত্রু এসকল ব্যক্তিদের সবচেয়ে পছন্দের বিষয়টি  EXCLUSIVELY সামনে রাখা হলো। 

বিবর্তনবাদ সম্পর্কিত গবেষণার ফলাফল কি ইসলামকে মিথ্যা প্রমাণ করে!?

নাস্তিক-মুরতাদেরা অর্থাৎ তথাকথিত ‘বিজ্ঞানমনস্ক’ মুক্তমনাদের সবচেয়ে বড় ফ্যলাসি হচ্ছে তারা বিজ্ঞানের দোহাই দিয়ে ইসলামকে রদ করতে চায়। আমরা সমসাময়িক ইতিহাস থেকে দেখতে পাই অধিকাংশ ‘বিজ্ঞানমনস্ক’ ব্যক্তিই দর্শন, বাঙলা, সমাজকর্ম কিংবা আইনের ছাত্র। অথচ এরা বিজ্ঞানের দোহাই দিয়ে থাকে। আসলে এথেকেই বোঝা যায় এই ‘নাস্তিক-মুরতাদ’গোষ্ঠী বিজ্ঞান সম্পর্কে ওয়াকিবহাল নয় এমন গোষ্ঠীকেই টার্গেট করে নাস্তিকতার দিকে আহ্বান জানায়।

কয়েকটি উদাহারণ, বাঙালি নাস্তিকদের সামনের সারির ব্যক্তিরা অভিজিৎ রায়, রায়হান আবির, অনন্ত দাস, অনিক আন্দালিবদের কেউই বায়োকেমিস্ট্রি, মাইক্রোবায়োলজি কিংবা জেনেটিক্সের উপর একাডেমিক পড়ালেখা দূরে থাকুক, কোর বায়োলজি নিয়েও এদের একাডেমিক পড়ালেখা নেই। স্রেফ নব্য নাস্তিকদের লেখা অনুবাদ করে এরা কাজ চালিয়ে থাকে।

এমনকি হাস্যকর ব্যাপার হচ্ছে এতদিন বিজ্ঞানলেখক, বিজ্ঞানমনস্ক ইত্যাদি বলে আসলেও তারা এখন অভিজিৎ রায়কে বিজ্ঞানী হিসেবেও আখ্যায়িত করছে! হায়!

আলহামদুলিল্লাহ! আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা এই উম্মাহ’র মাঝে হাসান ভাইয়ের মত যোগ্য ভাইকে পাঠিয়েছেন মিথ্যাবাদী প্রতারকদের বিপরীতে দাঁড়িয়ে যাওয়ার তাওফিক দিয়ে। যিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মাইক্রোবায়োলজি থেকে অত্যন্ত কৃতিত্বের স্নাতক শেষ করেছেন।

অশিক্ষিত নাস্তিক-মুরতাদদের কপি-পেস্ট লেখাজোখা/ভিডিও’র তুলনায় অত্যন্ত যুক্তিনির্ভর ও প্রমাণসহকারে ২টি ভিডিওতে চমৎকার আলোচনা করে মূর্খ নাস্তিকদের অবস্থান খন্ডন করেছেন এবং মুসলিমদের অন্তর প্রশান্ত করেছেন। যে ভাইয়ের বিবর্তনবাদের ব্যাপারে আগে শোনেন নি তারাও এই ভিডিও দুটি থেকে উপককৃত হবেন ইনশা’আল্লাহ। এছাড়াও, ভিডিও ২টির পাশাপাশি ভাই কিছু তাত্ত্বিক আলোচনা করেছেন যা নিচে জুড়ে দেয়া হয়েছে।

আল্লাহ তা’আলা ভাইকে উত্তম প্রতিদান দিন। আমিন।


98% similarity থাকা মানে এই নয় যে আমরা একই জায়গা থেকে তৈরি হয়েছি। 98% similarity থাকার মানে এও হতে পারে আমাদের একি সৃষ্টিকর্তা বানিয়েছে।

শুরুতে নিচের সহজবোধ্য দুটি আলোচনা দেখে নিন।

 

শুরুর আগে বলে দেই- এই আলোচনার শর্ত হচ্ছে আমাদের কমিউনিকেশানের ভিত্তি হবে কনটেন্ট, সাবস্টেন্স, যুক্তিতর্ক এবং সলিড রেফারেন্স। কোন রেফারেন্স ছাড়া কথা বা ক্লেইম আমরা সিরিয়াসলি নেব না। এছাড়াও মনে রাখবেন যে আমাদের গ্রুপে আমরা ভদ্রতার একটা স্ট্যান্ডার্ড মেইন্টেইন করে থাকি। সেটা ইগনোর করে পার্সোনাল অ্যাটাক করতে থাকলে এই ডিসকাশনের কোন মূল্য থাকবে না। এই শর্তগুলো মেনে আলোচনা করতে চাইলে পরের অংশ পড়ুন।

কনটেক্সট

=======

বিবর্তন নিয়ে আমাদের ভিডিও দুটো- প্রথমটার টপিক ধর্মতত্ত্ব, দ্বিতীয়টার বিজ্ঞান। প্রথমটায় আমরা আলোচনা করেছি বিবর্তনের কোন অংশটার সাথে ইসলামের সংঘাত। আমাদের উত্তর ছিল- শুধু মানুষের বিবর্তন ছাড়া বাকি জীবজগতের বিবর্তন মানতে মুসলিমদের কোন আপত্তি নেই, আর মানুষের উৎপত্তি হয়েছে আদম আর হাওয়া (আঃ) এর অলৌকিক সৃষ্টির মাধ্যমে। এই দুটো ক্লেইম একসাথে ইনকর্পোরেট করে আমরা একটা হাইপোথিসিসের কথা বলছি- কমন ডিজাইন এর বক্তব্য হচ্ছে, এমন হতেও পারে যে আল্লাহ বাকি জীবজগতের উৎপত্তির ক্ষেত্রে বিবর্তনের ধারা মেইনটেইন করেছেন- মানুষ ছাড়া বাকি প্রাণীদের উদ্ভব ঘটিয়েছেন প্রাকৃতিক আইনকানুনের মাধ্যমে।

এক পর্যায়ে আল্লাহ এই বিবর্তনের ধারা বন্ধ করে দিয়ে অলৌকিক একটা ইভেন্টের মাধ্যমে মানুষ প্রজাতির সৃষ্টি করেছেন। এই কনসেপ্টের সাথে ইসলামে বর্ণিত অন্যান্য মির‍্যাকিউলাস ফেনোমেনার মিল আছে, যেমন ঈসা (আঃ) এর জন্মের ক্ষেত্রে মুসলিমদের বিশ্বাস- আদম (আঃ) এর পর থেকে বাকি মানবজাতি বায়োলজিকাল রিপ্রোডাকশানের মাধ্যমেই এসেছে। কিন্তু ঈসা (আঃ) এর আসার যখন সময় হল, আল্লাহ তখন এই ট্রেন্ডটা তাঁর জন্য সাসপেন্ড করে তাকে মির‍্যাকিউলাসলি তৈরি করলেন। মানুষের বিবর্তন সম্পর্কে আমাদের প্রোপোজ করা মডেলটা এরকমই।

এই মডেলটার সাথে বিজ্ঞানের ইন্টার‍্যাকশানের জায়গা দু’টো। এক- এমন কোন বৈজ্ঞানিক তথ্য কী আছে যা এই মডেলটাকে রিফিউট করবে? আর দুই, এই মডেলটার কী কোন ইনডেপেন্ডেন্ট বৈজ্ঞানিক ভিত্তি আছে? মানুষের বিবর্তন নিয়ে আমাদের ভিডিওর আলোচনার বিষয় ছিল প্রথমটা। মানুষের বিবর্তনের পক্ষে আনা দু’ধরণের এভিডেন্স- ফসিল বা paleontology আর জেনেটিক্স- নিয়ে আলোচনা করে দেখিয়েছি, এই এভিডেন্সগুলো কমন ডিজাইন হাইপোথিসিসের সাথেও খাপ খাওয়ানো যায়। দ্বিতীয় বিষয়টা নিয়ে আমরা সময় স্বল্পতার জন্য ভিডিওতে আলোচনা করিনি। আমাদের দৃষ্টিতে প্রথম বিষয়টাই বেশি গুরুত্বপূর্ণ- একজন মুসলিম জানতে চান বিজ্ঞান কী কোনভাবে তার ধর্মের কোন দাবিকে ভুল প্রমাণ করছে কিনা। ইসলামের একটা দাবির পেছনে ইনডেপেন্ডেন্ট সায়েন্টিফিক কনফার্মেশান না থাকার চেয়ে সায়েন্স সরাসরি কোন দাবিকে ভুল প্রমাণ করা তার কাছে বড় ইস্যু। এ কারণেই আমরা আলোচনা শুধু প্রথম টপিকটাতেই সীমাবদ্ধ রেখেছি। তবে আমাদের দর্শকদের সাথে ইন্টার‍্যাকশানের সময় এই দ্বিতীয় বিষয়টাও উঠে এসেছে এবং আলোচনার অংশ হয়ে গিয়েছে।

আপত্তি

আমাদের বেশ কিছু দর্শক এই আমাদের কিছু যুক্তিতর্কের ব্যাপারে আপত্তি তুলেছেন। এদের সবার সাথেই আমরা এনগেজ করার চেষ্টা করেছি। কিন্তু একটা নির্দিষ্ট লাইন অফ ডিসকাশনে এত আলাদা আলাদা ইস্যু উঠে এসেছে যে সেগুলো কমেন্ট থ্রেডে আলোচনা করে আপনাদের চোখকে কষ্ট না দিয়ে আর্টিকলের নিট-অ্যান্ড-ক্লিন ফরম্যাটে আলোচনা করাই ভাল। মূল ডিসকাশনটা ঘটেছে এখানে-

এই আর্টিকলের মূল প্রতিপাদ্য হবে তাদের করা মেইন দাবিগুলোকে অ্যাড্রেস করার চেষ্টা করা। আমাদের প্রতিপক্ষের পার্সোনাল অ্যাটাক সত্ত্বেও আমাদের চেষ্টা থাকবে মার্জিত এবং অবজেক্টিভ আলোচনা করা।

আমাদের বক্তব্যের বিরুদ্ধে যে ক্লেইমগুলো করা হয়েছে সেগুলো এখন আমাদের মডেলের কনটেক্সটে দেখানো হল।

আমাদের ভিডিওর বক্তব্য ছিল আদম (আঃ) এর অলৌকিক ঘটনার বিরুদ্ধে কথিত সায়েন্টিফিক এভিডেন্স নিয়ে আলোচনা। এর প্রেক্ষিতে ক্লেইম করা হয়েছে, যেকোন অলৌকিক ঘটনা বাই ডেফিনিশান unfalsifiable.

– আমাদের কমন ডিজাইন মডেল বাকি জীবজগতের বিবর্তনের সাথে খাপ খাওয়ানো যায়- কারণ আমাদের মডেল এই দাবি করে না যে বাকি জীবজগতের বিবর্তন অলৌকিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে হয়েছে। এর প্রেক্ষিতে ক্লেইম করা হয়েছে, একটা মডেল যদি শুধু মানুষের ক্ষেত্রে অ্যাপ্লিকেবল হয় কিন্তু বাকি জীবজগতের “জায়গায় ফেইল মারে”, তাহলে সেটার কোন গ্রহণযোগ্যতা নেই।

– যদিও ভিডিওতে এই ক্লেইম করা হয়নি, কমেন্ট ডিসকাশনের এক পর্যায়ে আমরা বলেছি যে আমাদের এই কমন ডিজাইন মডেলের বিরুদ্ধে কোন সায়েন্টিফিক অবজেকশান ডিসাইসিভ তো নয়ই, বরং এর পক্ষে ইনডেপেন্ডেন্ট সায়েন্টিফিক কনফার্মেশান আছে। এই প্রেক্ষিতে ক্লেইম করা হয়েছে, ন্যাচারাল সিলেকশান মানুষ প্রজাতির ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য, বিশেষ করে মানুষের যেসব ইউনিক কিছু বৈশিষ্ট্য আছে- যার মধ্যে ভাষাজ্ঞানের উল্লেখ আমরা করেছি- সেটাও ন্যাচারাল সিলেকশান দিয়ে ব্যাখ্যা করা যায়।

– কীভাবে একটা অলৌকিক ঘটনার সায়েন্টিফিক মেরিট এস্ট্যাব্লিশ করা যায় সেটা নিয়ে আমাদের থিওরেটিকাল কিছু ডিসকাশন ছিল। খুব সহজ করে বলতে গেলে, আমরা বলেছিলাম- ডিটেইল্ড সায়েন্টিফিক এবং ফিলোসফিকাল সার্চের পরেও একটা ইভেন্টের যদি কোন ন্যাচারাল এক্সপ্লেনেশান পাওয়া না যায়, তাহলে আমরা বলতে পারি ইভেন্টটা সায়েন্স তথা প্রকৃতির আওতার বাইরে। এই প্রেক্ষিতে ক্লেইম করা হয়েছে, প্রকৃতির আওতা বা ক্যাপাসিটির বাইরে অ্যাবসোলিউটলি কিছুই ঘটে না এবং আপাতদৃষ্টিতে সব সুপারন্যাচারাল ফেনোমেনারই ব্যাখ্যা পাওয়া যায়।

– শূন্য থেকে মহাবিশ্বের সৃষ্টি সম্পর্কে একটা ট্যানজেনশিয়াল পয়েন্ট আমরা উদাহরণ হিসেবে তুলে এনেছিলাম। সেটার প্রেক্ষিতে ক্লেইম করা হয়েছে, শূন্য থেকে মহাবিশ্বের সৃষ্টি সংক্রান্ত আলোচনা সায়েন্সের আওতার মধ্যেই পড়ে।

এতগুলো ক্লেইম কোনটার সাথে কোনটা কীভাবে কানেক্ট করে সেটা বুঝতে অনেকে অসুবিধা হতে পারে। থ্রেড ডিসকাশনটার প্রবলেম হল আমাদের মডেলের বিগ পিকচারের দিকে না তাকিয়ে ইন্ডিভিজুয়াল কমেন্ট ধরে ধরে অ্যান্সার দেওয়া হয়েছে। এরকম আলোচনা সাধারণত খুব প্রোডাক্টিভ হয় না। কাজেই আমরা এখানে আপনাদের পুরো ডিসকাশনের বিগ পিকচারটা দেখাব।

 

কোন হাইপোথিসিস বা থিওরির গ্রহণযোগ্যতার তিনটা পর্যায় থাকে-

১। এর বিরুদ্ধে কোন সায়েন্টিফিক এভিডেন্স আছে কি?

২। একটা সায়েন্টিফিক হাইপোথিসিস/থিওরি হিসেবে এর গ্রহণযোগ্যতা আছে কি?

৩। এর পক্ষে কোন সায়েন্টিফিক এভিডেন্স আছে কি?

প্রথম পর্যায়ে টেকার পরেই সে দ্বিতীয় পর্যায়ে আসতে পারে, আর দ্বিতীয় পর্যায়ে টিকলে তৃতীয়। আমাদের কমন ডিজাইন হাইপোথিসিস নিয়েও আমরা এই তিনটা পর্যায়ে সংক্ষেপে আলোচনা করেছি- প্রথমটা ভিডিওতে, পরের দু’টো কমেন্টে। আমাদের প্রতিপক্ষের করা ক্লেইমকে এই তিনটা প্রশ্নের আলোকে ভাগ করে ফেলা যেতে পারে।

 

প্রথম ইস্যু- কমন ডিজাইন হাইপোথিসিসের বিরুদ্ধে কোন সায়েন্টিফিক এভিডেন্স আছে কি?

আমরা ভিডিওতে ফসিল এবং জেনেটিক এভিডেন্স নিয়ে আলোচনা করে দেখিয়েছিলাম যে না, নেই। আমাদের প্রতিপক্ষ সেই ডিসকাশনে আদৌ হাত দেননি। একজন এই ডিসকাশনের এগেইন্সটে একটা থিওরেটিকাল অবজেকশান এনেছেন এই মর্মে যে, যেকোন অলৌকিক ঘটনা ইন প্রিন্সিপল unfalsifiable। সেটা যদি সত্যি হয় তাহলে আমাদের ভিডিও ডিসকাশনের কোন মূল্য নেই।

আমাদের ভিডিওর আলোচনা নিয়ে ডিসকাশন কিন্তু এখানেই শেষ। আমাদের প্রতিপক্ষের বাকি ক্লেইমগুলো কমেন্টের আলোচনা বিষয়ক।

 

দ্বিতীয় ইস্যু- সায়েন্টিফিক হাইপোথিসিস হিসেবে কমন ডিজাইন হাইপোথিসিসের গ্রহণযোগ্যতা আছে কি?

সায়েন্টিফিক হাইপোথিসিস হিসেবে গ্রহণযোগ্যতা পেতে হলে কমন ডিজাইন হাইপোথিসিসের কিছু এক্সপ্লেনেটরি ক্রাইটেরিয়া মেনে চলতে হবে। সেই ক্রাইটেরিয়াগুলোর চেহারা কীরকম? আমরা একটা থিওরেটিকাল এক্সাম্পল দিয়েছিলাম, যেটার মূল বক্তব্য এরকম- কোন ইভেন্ট এক্সপ্লেইন করতে গিয়ে যদি ভালমত সায়েন্টিফিক সার্চের পরেও আমরা কোন এক্সপ্লেনেশান না পাই, তাহলে প্রোভিশনালি ধরে নিতে হবে ঘটনাটা অলৌকিক।

এর বিরুদ্ধে আমাদের প্রতিপক্ষ দু’টো একসাথে জড়িত আর্গুমেন্ট এনেছেন- এক, প্রকৃতির নিয়মের বাইরে অ্যাবসোলিউটলি কিছুই ঘটে না, ঘটতে পারে না। দুই, যদি আপাতদৃষ্টিতে মনে হয় যে এরকম কিছু ঘটছে, তাহলে অলৌকিক ঘটনা এক্সপ্লেনেশান হিসেবে হাজির করা হচ্ছে God of the gaps ফ্যালাসির শামিল। লক্ষ্য করুন, এই ক্লেইম দু’টো আমাদের ক্রাইটেরিয়াকে অ্যাড্রেস করে না, কারণ আমাদের ক্রাইটেরিয়া ছিল কন্ডিশনাল এবং থিওরেটিকাল (If X then Y ফর্মের, সেখানে X আসলেই ঘটেছে কিনা সেটা প্রশ্ন না)। সম্পূর্ণতার স্বার্থে এই ক্লেইমগুলোও আমরা অ্যাড্রেস করব।

আমাদের হাইপোথিসিসের সায়েন্টিফিক গ্রহণযোগ্যতার বিরুদ্ধে আমাদের প্রতিপক্ষের আরেকটা অবজেকশান ছিল এরকম- এটা শুধু মানুষের উৎপত্তির সাথেই খাপ খেতে পারে, বাকি জীবজগতের সাথে নয়। কাজেই এর কোন বৈজ্ঞানিক গ্রহণযোগ্যতা নেই।

 

তৃতীয় ইস্যু- কমন ডিজাইন হাইপোথিসিসের পক্ষে কোন সায়েন্টিফিক এভিডেন্স আছে কি?

কমেন্টে আমাদের বক্তব্যের মূল কথা ছিল হিউম্যান এক্সেপশনালিজম- মানুষের এমন কিছু বৈশিষ্ট্য আছে যা বাকি জীবজগতের মধ্যে নেই, এবং সেগুলো বৈজ্ঞানিক এক্সপ্লেনেশানের আওতার বাইরে। উদাহরণ হিসেবে আমরা উল্লেখ করেছিলাম মানুষের ভাষাজ্ঞান। আমাদের প্রতিপক্ষ বলেছেন এটাকেও ন্যাচারাল সিলেকশান দিয়ে ব্যাখ্যা করা সম্ভব।

চলুন তবে এই কয়টা ক্লেইম আগে অ্যাড্রেস করা যাক।

 

ক্লেইম- যেকোন অলৌকিক ঘটনার ক্লেইম ইন প্রিন্সিপল unfalsifiable অর্থাৎ কখনো এদের ভুল প্রমাণ করা যায় না।

যে কেউ কিছুক্ষণ চিন্তা করলেই বুঝতে পারবেন এই ক্লেইমটা অ্যাবসার্ড। উদাহরণ দিচ্ছি। মনে করুন, কেউ ক্লেইম করল যে সে হুকুম দেওয়ার সাথে সাথে আকাশ থেকে বৃষ্টি পড়া শুরু করবে। এখানে সে একটা অলৌকিক ঘটনার দাবি করছে, কিন্তু এটাকে চোখের নিমিষের falsify করা যায়। আপনাকে শুধু বলতে হবে- বেশ তো, বৃষ্টি নামিয়ে দেখাও দেখি। সে যদি সাথে সাথে সেটা করতে না পারে তাহলে এভিডেন্স এই অলৌকিক ঘটনার ক্লেইমকে falsify করে ফেলবে।

একইভাবে অনেকে দাবি করেন মানুষের অলৌকিক সৃষ্টির বিরুদ্ধে এভিডেন্স আছে- সেটা ফসিলের গ্র্যাজুয়ালিজম বা জেনেটিক হোমোলজি বা যেটাই হোক না কেন। এ ব্যাপারে বইগুলো যদি আপনারা পড়েন, দেখবেন সেখানে assumption টাই হচ্ছে মানুষের অলৌকিক সৃষ্টির ক্লেইমটা ফলসিফিয়েবল। Daniel Fairbanks এর বইয়ের উল্লেখ কমেন্টে একবার করেছি, এখানে আবার করছি- সেখানে তিনি প্রত্যেকটা চ্যাপ্টারে মানুষের অলৌকিক সৃষ্টির বিপক্ষে মলিকিউলার বায়োলজির ভিত্তিতে কিছু এভিডেন্স এনেছেন। আমাদের রিসার্চ অনুসারে তার ক্লেইমগুলোর মধ্যে ফ্যাকচুয়াল ভুল আছে- আরো জানতে চাইলে রেফারেন্স দেব- কিন্তু তার বই যে ব্রডার পয়েন্টটা প্রুভ করে সেটা হচ্ছে অলৌকিক ঘটনার ক্লেইম অতি অবশ্যই ক্ষেত্রবিশেষে ভুল প্রমাণযোগ্য। এই ডিসকাশনটা আছে বলেই আমরা ভিডিও তৈরি করেছি।

মির‍্যাকেলের দর্শন এবং এই রিলেটেড আরো কিছু অব্জেকশান সম্পর্কে জানতে একটা টেক্সট রেফারেন্স সাজেস্ট করছি। Michael Rea আর Michael Murray এর বই- Introduction to Philosophy of Religion এর Religion and Science অংশটা পড়ে দেখতে পারেন।

 

ক্লেইম- প্রকৃতির নিয়মের বাইরে অ্যাবসোলিউটলি কিছুই ঘটেনা।

বিশেষ করে পপুলার ডিসকাশনে এই God of the gaps অ্যাপিলের কথা একটা meme এ পরিণত হয়েছে। এটা নিয়ে আমাদের আলাদা এপিসোড আছে, এখান থেকে দেখে নিন- https://www.youtube.com/watch?v=9exx65EL2a8

এ ব্যাপারে দু’টো চমৎকার রিডিং ম্যাটেরিয়াল দিচ্ছি। প্রথমত, Princeton philosopher of Physics Bradley Monton এর একটা বই আছে Seeking God in Science: An Atheist Defends Intelligent Design। লেখক নাস্তিক এবং বইতে স্পষ্টভাবে লিখেছেন আস্তিকতার আর্গুমেন্টগুলো তার কাছে গ্রহণযোগ্য নয়। কিন্তু তা সত্ত্বেও দ্বিতীয় চ্যাপ্টারে তিনি বলেছেন যে God of the gaps অ্যাপিলের মাধ্যমে বিভিন্ন হাইপোথিসিসকে অবৈজ্ঞানিক লেবেল দেওয়ার কোন ভিত্তি নেই। তিনি শুধু ক্লেইম করেননি, তার পজিশানের পক্ষে যুক্তিতর্কও তুলে এনেছেন। আরেকটা রেফারেন্স হচ্ছে The Nature of Nature: Examining the Role of Naturalism in Science বইতে Stephen Meyer এর এসে, Sauce for the Goose.

 

ক্লেইম- কমন ডিজাইন হাইপোথিসিসের কোন গ্রহণযোগ্যতা নেই কারণ এটা বাকি জীবজগতের বিবর্তনের সাথে খাপ খায় না

এই ক্লেইমটা তখন সত্য হত যদি আমরা দাবি করতাম যে কমন ডিজাইন হাইপোথিসিস দাবি করে যে যাবতীয় প্রাণীজগত অলৌকিকভাবে এসেছে। আমরা এরকম কোন ক্লেইম করিনি। আমাদের মডেলের বেসিস হচ্ছে human exceptionalism- বাকি প্রাণীজগত বিবর্তনের মাধ্যমেও যদি এসে থাকে, মানুষের ক্ষেত্রে সেই ট্রেন্ড কন্টিনিউ করে নি। কাজেই এই মডেলের বক্তব্য বাকি জীবজগতের বিবর্তনের সাথে খাপ খাওয়ানো আমাদের উদ্দেশ্যও নয়।

এখানে উল্লেখ্য যে মানুষের ক্ষেত্রে যে অলৌকিক উৎপত্তির কথা বলা হচ্ছে সেটা arbitrary নয়, বা আমাদের ধর্মবিশ্বাসের ওপর নির্ভরশীল নয়। আমরা বলছি মানুষের কিছু ইউনিক ক্যারেক্টারিস্টিক্স আছে যেটা ন্যাচারালিস্টিক বিবর্তন ব্যাখ্যা করতে পারে না। অর্থাৎ মানুষের কিছু বৈশিষ্ট্য আসলেই সায়েন্টিফিক এক্সপ্লেনেশানের আওতার বাইরে পড়ে। এই সায়েন্টিফিক গ্রাউন্ডের ওপরেই আমাদের মডেল দাঁড়িয়ে। এরকম হিউম্যান এক্সেপশনালিস্ট ক্যারেক্টারিস্টিক অনেক আছে, এ ব্যাপারে আরো ইনফর্মেশান এবং রেফারেন্স চাইলে Dr. Vincent Torley এর এই আর্টিকল রিভিউটা দেখতে পারেন- http://www.uncommondescent.com/intelligent-design/the-myth-of-the-continuum-of-creatures-a-reply-to-john-jeremiah-sullivan-part-one/

আমরা আলোচনার সুবিধার্থে শুধু একটা ব্যাপার টেনে এনেছি- ল্যাঙ্গুয়েজ বা ভাষাজ্ঞান।

 

ক্লেইম- মানুষের ভাষাজ্ঞান ন্যাচারাল সিলেকশান দিয়ে ব্যাখ্যা করা যায়।

এই একটা জায়গাতে আমাদের প্রতিপক্ষ কিছু রেফারেন্স আনার অন্তত চেষ্টা করেছেন। সেগুলোর দিকে আমরা এবার তাকাব।

দু’টো পেপারের রেফারেন্স আমরা পেয়েছি- একটা ব্লুম আর পিঙ্কারের ইভোলিউশনারি সাইকোলজি বেসড, আরেকটা চমস্কি আর গুল্ডের নন-অ্যাডাপ্টিভ অ্যাকাউন্ট। আমাদের প্রতিপক্ষ এই দাবিটাও করেছেন যে অন্যান্য প্রাণীদেরও ভাষার একধরণের ক্রমবিবর্তন হয়েছে। এই দু’টো রেফারেন্স আর তিনটা ক্লেইম একটু কনফিউজিং।

কারণ পিঙ্কার-ব্লুমের থিসিস হচ্ছে ল্যাঙ্গুয়েজ জিনিসটার অ্যাডাপ্টিভ ভ্যালু আছে, এবং আর দশটা বায়োলজিকাল প্রপার্টির মত এটাও “সিলেক্টেড” হয়েছে। অন্যদিকে চমস্কির খুব জোরালো ক্লেইম হচ্ছে ল্যাঙ্গুয়েজের কোন অ্যাডাপ্টিভ ভ্যালু নেই। মানুষের ইন্টেলিজেন্সটা ন্যাচারালি সিলেক্টেড হয়েছে, তার সাথে একটা ইভোলিউশনারি স্প্যান্ড্রেল হিসেবে ভাষার বিবর্তন হয়েছে। অর্থাৎ চমস্কি পিঙ্কারের অ্যাডাপ্টিভ অ্যাকাউন্টের জোরালো ক্রিটিক। এখানে পরস্পরবিরোধী দু’টো পেপারের রেফারেন্স দেওয়া হয়েছে।

কনফিউশানের এখানেই শেষ নয়। চমস্কির লিঙ্গুইস্টিক্সের পাঠক মাত্রই জানেন ল্যাঙ্গুয়েজের দিক দিয়ে চমস্কি human exceptionalism এর খুব বড় প্রবক্তা (আমাদের ভিডিওর মধ্যেই তাঁর Language and Mind থেকে কোট দেওয়া হয়েছে)। অন্যান্য প্রাণীদের মধ্যে ভাষা বা ভাষার কোন অ্যানালগ থাকা- এটাকে কোনভাবেই চমস্কির ভিউয়ের সাথে খাপ খাওয়ানো যায় না। কাজেই আমাদের প্রতিপক্ষ এরকম পরস্পরবিরোধী তিনটা পজিশানের উল্লেখ করে নিজেদেরকেই বিপদে ফেলেছেন (অ্যাজিউম করলাম তিনি রেফারেন্সগুলো আসলেই পড়ে দেখেছেন)।

যাইহোক, চমস্কি এবং পিঙ্কার এর নন-অ্যাডাপ্টিভ এবং অ্যাডাপ্টিভ এই দুই থিওরির রিভিউ সম্পর্কে আরো জানতে Jeffery L. Johnson আর Joyclynn Potter এর ২০০৫ এর পেপারটা পরে দেখতে পারেন। সেখানে তারা আর্গুমেন্ট দিয়েছেন যে মানুষের ল্যাঙ্গুয়েজের কোন বৈজ্ঞানিক এক্সপ্লেনেশান নেই, এবং সেটা করতে গিয়ে পিঙ্কার এবং চমস্কির ভিউয়ের রিভিউ লিখেছেন। আগে থেকেই বলে দিচ্ছি পেপারের কনটেন্ট কি যাতে দুই-তিনটা পরস্পরবিরোধী পজিশান নিয়ে ঝামেলায় পড়তে না হয়।

পঞ্চাশের দশক থেকেই নৌম চমস্কি মানুষের ভাষাজ্ঞানের একটা ইউনিক থিওরি দিয়েছেন, যেটা মোটামুটি মডার্ন লিঙ্গুইস্টিক্সে সমাদৃত। খুব সংক্ষেপে ব্যাপারটা এরকম- ভাষার ইউনিটগুলো হল ভোক্যাবুলারি, গ্রামার, আর CALU বা Creative Aspect of Language Use. এই তৃতীয় ব্যাপারটার মধ্যে আরো তিনটা প্রপার্টির উল্লেখ থাকে- unboundedness, freedom from stimulus, আর appropriateness of situation or context। এই তিন প্যাকেজওয়ালা CALU ইউনিট শুধু মানুষের মধ্যেই পাওয়া যায়, অন্য কোন প্রাণীর মধ্যে এর ধারেকাছেও কিছু মেলে না।

চমস্কির Cartesian Linguistics এ এই কন্সেপ্টের সবচেয়ে ডিটেইলড আলোচনা এসেছে। লিঙ্গুইস্ট Mark Baker তার Brains and Souls এসেতে এই CALU ইউনিট নিয়ে আলোচনা রেখেছেন, এবং comparative linguistics, genetics আর neuroanatomyr বেসিসে দেখিয়েছেন- এই ইউনিটটা আমাদের বায়োলজিকাল মেকআপের কোথাও বসানো যায় না (এই essay টা Stewart Goetz আর Mark Baker এর The Soul Hypothesis: Investigations into the Existence of the Soul বইতে পাবেন)।

আমাদের এই সংক্ষিপ্ত ডিসকাশনের কিউমিউলেটিভ কনক্লুশান হচ্ছে মানুষের ভাষাজ্ঞান ইটসেলফ বা এর উৎপত্তি- কোনটারই আজ পর্যন্ত সন্তোষজনক কোন সায়েন্টিফিক এক্সপ্লেনেশান পাওয়া যায় না। আমাদের প্রতিপক্ষ তাদের ক্লেইম সাবস্ট্যানশিয়েট করতে পারেন নি।

এই পুরো ডিসকাশনের উপসংহার এরকম। যারা মানুষের বিবর্তন নিয়ে আমাদের ভিডিওর সমালোচনা করেছেন, তারা ভিডিওর মূল সায়েন্টিফিক ডিসকাশনে আদৌ হাত দেননি বললেই চলে। তাদের ডিসকাশন হয়েছে ভিডিও নিয়ে করা আমাদের কমেন্টের ওপর। সেখানে তাদের ডিসকাশনেও সায়েন্টিফিক কনটেন্ট বা সাবস্টেন্স ছিল না বললেই চলে, তারা শুধু বিভিন্ন ক্লেইম করেছেন আর পার্সোনাল অ্যাটাক করেছেন। কদাচিৎ তারা যে আর্গুমেন্ট আর রেফারেন্স দেওয়ার চেষ্টা করেছেন সেগুলোর সংক্ষিপ্ত রিবাটাল এবং রেলেভ্যান্ট রেফারেন্স এই পোস্টে দেওয়া হল।

 

কৃতজ্ঞতাঃ The One Message.

 

 

Leave a comment